শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:০৭ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :

দুই সিটি কর্পোরেশনের ব্যর্থতায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে: হাইকোর্ট

তরফ নিউজ ডেস্ক : ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি) যথাসময়ে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়নি। এটা নিলে হয়তো পরিস্থিতি এমন হতো না। তাদের দক্ষতার অভাব রয়েছে। তারা (সিটি করপোরেশন) সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করে জনগণের ওপর দায় চাপাচ্ছে। জনগণকে তাদের ঘরবাড়ি পরিষ্কার করতে বলা হচ্ছে। জনগণকে সচেতন হতে হবে-এটা ঠিক। কিন্তু সব দায় জনগণের এমনটা ভাবার কোনো সুযোগ নেই।

রোববার (১৮ আগস্ট) বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এসব মন্তব্য করেন। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সরকারের গৃহীত কার্যক্রম প্রতিবেদন আকারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অবহিত করে।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এবিএম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুল আলম।

শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে কতজন মারা গেছে তা নিয়ে পত্রপত্রিকায় দুইরকম তথ্য দেখছি। সরকারি হিসাবে বলা হচ্ছে ৪৮ জন। কিন্তু বেসরকারি হিসাবে বলা হচ্ছে ৭২জন। এটা নিয়ে দুইরকম তথ্য কেন?’
জবাবে আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার বলেন, ‘সরকারি হিসাবে ৪৮ জন। যারা ডেঙ্গুতে মারা গেছেন তাদের কারও কারও অন্য রোগ থাকতে পারে। কারও হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। তাই এটা পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিষয়।’

এসময় আদালত বলেন, ধরে নিচ্ছি, ৪৮ জনই মারা গেছে। যারা মারা গেছে তাদের পরিবারের কি অবস্থা তা একবার ভেবে দেখুন। ডেঙ্গু এখন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। যথাসময়ে যদি প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেওয়া হতো তাহলে হয়তো এত লোককে মরতে হতো না। আদালত বলেন, শরীয়তপুর থেকে একজন ঢাকায় সেবা দিতে এসে মারা গেছে। সে যদি গ্রামে থাকতো তাহলে হয়তো তাকে মরতে হতো না।

আদালত বলেন, গত ফেব্রুয়ারিতে আমরা সতর্ক করেছিলাম। দুই সিটির সচিবকে ব্যবস্থা নিতে বলেছিলাম। কিন্তু আমাদের আদেশের পর দুই সিটির কর্তা ব্যক্তিদের কাছ থেকে যে ধরণের কথাবার্তা শুনলাম তা কারো কাম্য নয়। ডেঙ্গু এখন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। সরকার বা দুই সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা যথাসময়ে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়নি। এটা নিলে হয়তো এরকম পরিস্থিতি হতো না। যাদের সঠিকভাবে বিষয়টি তদারকি করার দাযিত্ব ছিল তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেননি। তাদের দক্ষতার অভাব রয়েছে।

আদালত বলেন, ডেঙ্গু মশার লার্ভা ও ডিম থাকে পানিতে। উনারা সেটা পরিষ্কার না করে রাস্তায় ময়লা ফেলে পরিষ্কার করলেন। এটা নেহায়েতই হাস্যকর। কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই বছরের পর বছর একই ওষুধ ছেটানো হচ্ছে। অথচ ওই ওষুধে কাজ হচ্ছে না। একটি ওষুধ বারবার ব্যবহার করলে তা সহনীয় হয়ে যায়। এটা বুঝতে হবে। দেখুন না, এখন এ্যারোসল আর ঠিকমতো কাজ করে না। এসময় একজন আইনজীবী বলেন, অ্যারোসলে মশা মরে না।

এর আগে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করতে গেলে আদালত বলেন, আমরাতো কোনো রুল জারি করিনি। আরেকটি আদালত রুল দিয়েছে। সেখানে রিপোর্ট দিন। এসময় ডিএজি বলেন, এই আদালত মৌখিকভাবে এক আদেশে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ জানতে চেয়েছিলেন। তাই সরকার বিষয়টি জানিয়েছে।

তিনি সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে বলেন, সরকার এটা নিয়ে খুবই আন্তরিক। সকল সরকারি হাসপাতালে সরকারি ছুটি বাতিল করা হয়েছে। বিদেশ থেকে ওষুধ আমদানিতে শুল্ক মুক্ত করা হয়েছে। ১০টি সার্ভিলেন্স টিম গঠন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এরইমধ্যে ৪০টি হাসপাতালে ভ্রাম্যম্যান আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। যেসব হাসপাতাল সরকারি নির্দেশনা অমান্য করেছে তাদের আর্থিক জরিমানা করা হয়েছে। এই অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আদালত বলেন, এটা নিয়ে আমরা কোনো আদেশ দিচ্ছি না।

এদিকে শনিবার সকাল আটটা থেকে রোববার সকাল আটটা পর্যন্ত সারাদেশে নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৭০৬ জন। এরইমধ্যে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে। চলতি মৌসুমে সারাদেশে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে রোববার সকাল আটটা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১৭০৬ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। দেশের বিভিন্ন জেলার পরিস্থিতিরও অবনতি হয়েছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com